বেড়েছে চাল-আটা-ডালের দাম, তবে কিছুটা কমেছে ডিম আর মুরগির দাম
বিশেষ প্রতিবেদন
সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত-ই এখন নিত্যপন্যের দাম গুলো আগে জানতে চায়। খবর রাখছে চালের দাম কত, চিনি দাম আর কত বেড়েছে? অথবা তেলের দাম আর বাড়বে কি-না? নিত্যপন্যের দাম খবরা-খবর আগে মানুষ খুব জানতে আগ্রহী ছিল না বা সমাজের সর্বোস্তরে আলোচনার বিষয় ছিল না। এর মুল কারণ নিত্যপন্যের দাম এখন সাধারণ মানুেষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
তাই মানুষ এখন খাদ্যদ্রব্যের দামের খবরটা ২৪ ঘন্টাই ফলো করছে। সেটা মাথায় রেখেই আজকের বাজারের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো- এ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল, ডাল ও আটার দাম বেড়েছে। তবে কমেছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরা আজমপুর কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজার, মগবাজার বাজার, কারওয়ান বাজার ও সায়েদাবাদ বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৬০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দেশি রসুন কেজিতে ১০ টাকা কমে মানভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২২০ থেকে ২৪০ টাকা।
এদিকে বাজারে ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ১৯০ বা তারো বেশি দামে। সেই হিসাবে এই মাংসের দাম কমেছে ১০ টাকা। অন্যদিকে বাজারে কমতে শুরু করেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা।
মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। প্রতি কেজি সাধারণ মানের পাইজাম বা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। আর মাঝারি মানের চাল কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও ভালো মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে।
এছাড়া প্যাকেট আটায় ৪ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় ঠেকেছে। প্যাকেট ময়দায় দাম ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ৮০ টাকা হয়েছে। খোলা আটা কেনা যাচ্ছে ৬৫ টাকায়, আর ময়দা ৭৫ টাকায়।
ভোজ্যতেল ও চিনির বাড়তি দাম বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন দামে এক লিটারের বোতল সয়াবিন তেল ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৭৮ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতল সয়াবিন তেলের নতুন দাম ৯২৫ টাকা। আগে ছিল ৮৮০ টাকা। খোলা সয়াবিনের নতুন দামে প্রতি লিটার ১৭২ টাকা। এতদিন ছিল ১৫৮ টাকা।
এছাড়া ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দামে। কোথাও কোথাও কিছুটা কম দামে ১১৫ টাকায় চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বেড়ে চলেছে প্রায় সব ধরনের ডালের দাম। নতুন করে বাড়ছে ছোলার দামও। খোলা বাজারে মসুর ডালের কেজি মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা এবং ছোলার প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে শীতকালীন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। ১২০ টাকার সিম কমে এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। গাজর ও পাকা টমেটোর কেজি ১০০ টাকা, পটল, করলা, বেগুন, লতির কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিপিস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে তেল ও চিনির দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ দুই পণ্য ও চাল বাদে বাকি পণ্যগুলো প্রায় পুরোটা আমদানি নির্ভর। সেগুলো পণ্যের দাম নির্ধারিত না থাকায় দফায় দফায় বাড়ছে। আর মৌসুম শেষে সরবরাহ কমতে থাকায় বাড়ছে চালের দাম।
যেসব পণ্যের দাম কমেছে সেগুলো বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। উত্তরা আজমপুর কাঁচা বাজারের ক্রেতা আনিস মিয়া বলেন, বর্তমানে সরকার বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করেছে। প্রায় বাজারে আসছে মোবাইল কোর্ট। সেজন্য পণ্যের দামে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।